তথ্য-প্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেফতার অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা মেইলের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকসহ ৩ জনকে হাতে দড়ি বেঁধে আদালতে হাজির করার ঘটনায় প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। গত মঙ্গলবার (৯আগস্ট) তাদের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করলে আদালত তা নাকচ করে তিনজনকেই জেলহাজতে পাঠিয়ে দেন। ওই দিন আদালতে আনা-নেওয়ার পথে হাতকড়া ও দড়ি দিয়ে পরস্পরের হাত বাঁধা ছিল। ওই ছবি প্রকাশ পেয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ছবিতে স্পষ্ট যে, বাংলামেইলের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাহাদাত উল্যা খান, নির্বাহী সম্পাদক মাকসুদুল হায়দার চৌধুরী ও নিউজ রুম এডিটর প্রান্ত পলাশ—প্রত্যেকের হাতে হাতকড়া ছাড়াও তাদের পরস্পরের হাত দড়ি দিয়ে একসঙ্গে বাঁধা ছিল। গত ৭ আগস্ট ‘বিমান দুর্ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয়ের মৃত্যুর গুজব’-এই শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ করায় তাদের ওইদিন রাতে গ্রেফতার করা হয়।
এই তিনজনকে দড়ি ও হাতকড়া পরিয়ে আদালতে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পল্টন থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা জানি না। আমরা প্রিজনভ্যানে তুলে দেই। হাতকড়া ও দড়ি দিয়ে বাঁধার কাজ কোর্ট পুলিশ করে থাকতে পারে। তবে প্রসিকিউশনের সহকারী কমিশনার মিরাজউদ্দিন আহমেদ থানা পুলিশকেই দায়ী করেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাধারণত থানা থেকেই দড়িতে বেঁধে পাঠানো হয়। তবে এই মামলায় কী হয়েছে, তা আমার জানা নেই। আর রিমান্ডের আসামি ছাড়া দড়ি দিয়ে বাঁধার নিয়ম নেই।’
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সম্পাদক নূর খান বলেন, ‘কেউ আসামি হলেও তার সম্মান আছে। কোনোভাবে যেন সম্মানে আঘাত না লাগে, সেদিকে নজর রাখার দায়িত্ব সরকারের। আদালতে তাদের যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে একটা পেশার ওপরে এক ধরনের আক্রোশ থেকে হচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।’
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘কিভাবে আদালতে নিয়ে যাবে, তা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার ওপর নির্ভর করে। তিনি আরও বলেন, যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাতে আইনি প্রক্রিয়াগুলো মানা হয়নি বলে আমি মনে করি। এটা আইসিটি আইনের অধীনে হলেও পুলিশ সরাসরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক চলবে।’
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘এটা খুবই সংবেদনশীল বিষয়। আমরা দেখছি।’ তবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শাবান মাহমুদ বলেন, ‘আইনের চোখে সবাই সমান। কোনও সাংবাদিক যদি রাষ্ট্রবিরোধী কোনও কাজ করেন, সংবিধানের ৩৯ ধারা বহির্ভূত কাজ করেন এবং সাংবাদিকতার স্বাধীনতার নামে এমন কোনও কাজ করে যেটি সমাজে বা রাষ্ট্রে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে, সেটা কাঙ্ক্ষিত বা প্রত্যাশিত নয়। কোনও সাংবাদিক অপরাধ করলে সেটি বিচারের দাবি রাখে কিন্তু সে বিচারের প্রক্রিয়া যদি স্পর্শকাতর বা অমানবিক হয়, তাহলে সেটা কোনোভাবেই সাংবাদিক সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।’
উল্লেখ্য, গত ৮ আগস্ট অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলামেইলের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকসহ চারজনের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা করে র্যাব। এই চারজনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, সাবেক (স্বতন্ত্র) সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফজলুল আজিমকে পলাতক দেখানো হয়েছে। বাকি তিনজন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাহাদাত উল্যা খান, নির্বাহী সম্পাদক মাকসুদুল হায়দার চৌধুরী ও নিউজ রুম এডিটর প্রান্ত পলাশকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
পাঠকের মতামত: